চারলেন সড়ক ও এয়ারপোর্ট চালু
স্বপ্ন পূরণে আসল
সত্য কোনটি?
সম্প্রীতি প্রতিবেদক
পাবনা জেলাবাসীর স্বপ্ন পূরণে দুটি ঘোষণা সামনে এসেছে। একটি হলো পাবনা শহরের ভেতর দিয়ে চারলেন সড়ক নির্মাণ এবং আরেকটি ঈশ্বরদীর বিমান বন্দর চালু। দুটোই পাবনা জেলাবাসীর দীর্ঘকালের প্রত্যাশিত স্বপ্ন।
পাবনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, পাবনা বাস টার্মিনাল থেকে এ হামিদ সড়ক হয়ে গাছাপাড়া পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার (আধুনিক ড্রেনেজ, লেন এবং ফুটপাতসহ) সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হয়েছে। একনেট এটি অনুমোদন করলেই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। সওজ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাদিকুর রহমান জানিয়েছেন, এরইমধ্যে সার্ভে এবং ভূমি অধিগ্রহণ ম্যাপ তৈরি হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ জানান, এই প্রকল্প হাইওয়ে মাস্টার প্লানে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, একনেক অনুমোদন করলেই পাবনা শহরের ভেতর চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া অতিসম্প্রতি গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, সড়ক ও রেলপথে চাপ কমিয়ে পর্যটন খাতসহ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ২৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে দ্রুত সচল করা হচ্ছে পরিত্যক্ত সাতটি বিমান বন্দর। এই সাতটির একটি পাবনার ঈশ্বরদী বিমান বন্দর। তিনি জানান, এসব বিমানবন্দর সংস্কারে ব্যয় নিরূপণসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। যে সাতটি বিমান বন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে ঈশ্বরদী বিমান বন্দর, বগুড়া বিমানবন্দর, ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দর, লালমনিরহাট বিমান বন্দর, মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমান বন্দর, কুমিল্লা বিমান বন্দর ও রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর। তিনি উল্লেখ করেন, সবার আগে চালু হবে বগুড়া বিমান বন্দর। তার পরের তালিকায় আছে ঈশ্বরদীসহ বাকিগুলো। তিনি আশা করেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বিমানবন্দরগুলো সচল হলে বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে। সিভিল এভিয়েশনের সূত্র বলছে, সচল রুটের সঙ্গে চলতি বছর থেকে শুরু করে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই যুক্ত হবে বগুড়া, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, মৌলভীবাজারের শমসেরনগর ও রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর।
এমন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই পাবনা জেলাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তবে স্বস্তি এবং স্বপ্নের মাঝেও কিছু উদ্বেগ ও সন্দেহ কাজ করছে। কারণ দুই উদ্যোগই বহু আগের, কিন্তু আজও পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে চারলেন সড়ক করতে পুরো শহরের কাঠামো বদলে ফেলতে হবে, ভাঙতে হবে সড়কের দুইপাশের সমস্ত ভবন, দালান-কোঠা-অবকাঠামো এবং স্থাপনা। যারমধ্যে রয়েছে জেলা প্রশাসন কার্যালয়, জজকোর্ট, সেটেলমেন্ট কার্যালায়, আইনজীবী ভবন, পুলিশ লাইন-জেলখানাসহ শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রাচীন স্থাপনা। এগুলো ভেঙে ফেলা মোটই সহজ নয়। এরসঙ্গে যেমন ঐতিহ্যের স্মৃতি সংক্রান্ত প্রশ্ন রয়েছে, তেমন রয়েছে মহাপরিকল্পনা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ বৃহৎ অর্থ ব্যয়েরও প্রশ্ন। সে কারণে ওয়াকেবহালদের কথা, গৃহীত উদ্যোগটি বাস্তবায়নে আর্থিক এবং অন্যান্য সামর্থ্য কর্তৃপক্ষের আছে কিনা এবং এক্ষেত্রে ভূমিসংশ্লিষ্ট সব মহলের সহযোগিতা থাকবে কিনা- তার উপরই নির্ভর করবে সবকিছু। সুতরাং প্রত্যাশিত স্বপ্ন কতোদিনে পূরণ হবে, বা আদৌ পূরণ হবে কিনা- তা এখনই বলার সময় আসেনি।
অনেকটা একই প্রশ্ন রয়েছে ঈশ্বরদী বিমান বন্দরের ব্যাপারেও। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলীয় জেলা পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ১৯৬২-১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকায় ফ্লাইটের আসা-যাওয়া ছিল। এরপর ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করলেও, আবারও বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তারপরেও অনেকবার এটি চালু করার উদোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা এখন জানাচ্ছেন, পরিত্যক্ত থাকায় বিমানবন্দরের রানওয়ের অংশবিশেষ বেদখল হয়ে গেছে। এগুলো দখলমুক্ত করে সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের কাজ করতে হবে। ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে থাকা বর্তমান রানওয়ে উন্নীত করে ৬ থেকে ৮ হাজার ফুটের মধ্যে আনতে হবে। তবেই বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে। বড় বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে ও অন্যান্য নানান অবকাঠামোও তৈরি করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই দূরত্বে, অর্থাৎ নো-ফ্লাইজোন এড়িয়ায় এয়ারফিল্ড চালু করা বিধিসম্মত নয়। যা বিদ্যুতকেন্দ্রর জন্য বড় মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে কোনভাবেই সম্মতি দেবে না। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে যেখানে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর রয়েছে, সেখান থেকে এটিকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে নতুন করে স্থাপন করা অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। ফলে এখানেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- সহসাই মানুষের স্বপ্ন পূরণ আদৌ সম্ভব কিনা?
[১৪ জুন ২০২৫]
0 Comments: