
গবেষণা ও প্লেট বিশ্লেষণ তথ্য
প্রস্তুত হচ্ছে শক্তিশালী ভূমিকম্প
সম্প্রীতি
প্রতিবেদক
ভূমিকম্প
নিয়ে গবেষণায় বিপদজনক তথ্য পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, ভূ-গর্ভে শক্তিশালী ভূমিকম্প প্রস্তুত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে ধ্বংসযজ্ঞ রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের তালিকায় পাবনার নামও রয়েছে। গবেষণা যা বলছে তাতেকরে বর্তমানে এই উৎপত্তিস্থল পাবনাসহ পদ্মা নদীর তলদেশে অবস্থান করছে।
প্রাকৃতিক
বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ন্যাচার পোর্টফোলিওর ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব বিপদজনক বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। গত ১৭ জুন এই গবেষণা প্রতিবেদনটি একযোগে লন্ডন, নিউইয়র্ক সিটি, বার্লিন এবং সাংহাই থেকে প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলারের নেতৃত্বে শিলং মাসাফি ও ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের প্লেট বিশ্লেষণ করে সমীক্ষা প্রকাশের পর এটিই নতুন গবেষণা প্রতিবেদন। শিলং মাসাফি ও ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের প্লেট বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, সাড়ে ৭ বা ৮ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আবারও এ অঞ্চলে আঘাত করতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের ওপর।
এখন ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালের গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, আড়াই হাজার বছর আগের এক ভূমিকম্পে পদ্মা নদীর গতিপথ বদলে গিয়েছিল। ৭.৫ থেকে ৮ তীব্রতার শক্তি নিয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্পটি, যার প্রভাবে পদ্মা বা গঙ্গার মূল গতিপথ অনেক দূর সরে যায়। যদিও ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়া পদ্মার অংশটির দূরত্ব ছিল অন্তত ১৮০ কিলোমিটার। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালের গবেষণাপত্রের সহ-লেখক মাইকেল স্টেকলার বলছেন, ‘আমরা মনে হয় না, (পদ্মা) নদী ছিন্নকরণের এমন বিশাল ঘটনা আগে কেউ কখনও দেখেছেন।’ ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালের গবেষণাপত্র আরও বলছে, অন্যান্য বড় ব-দ্বীপের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মত ভূমিকম্প ছাড়াই গঙ্গা বা পদ্মাও আপন খেয়ালে তার গতিপথ বদলাচ্ছে। এ অবস্থায় উৎস থেকে চলার পথে বয়ে আনা প্রচুর পলি জমে পদ্মার বুক ক্রমেই উঁচু হচ্ছে। এতে করে নদীর বুকে চর জাগছে, যেগুলো নদীর দুই পাড়ের ভূমির চেয়েও উঁচু হয়ে যাচ্ছে। চরের কারণে স্রোত বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ওইসব স্থান থেকে আপন গতিতেই সৃষ্টি হচ্ছে নদীর নতুন পথচলা। বছরের পর বছর ধরে এ প্রক্রিয়ায় নদীর গতিপথ বদলাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বড় ভূমিকম্প এক নিমেষেই ঘুরিয়ে দিতে পারে নদীর সব স্রোতধারা।
গবেষণাপত্রটি প্রধান লেখক নেদাল্যান্ডসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, ভূ-বিশারদ লিজ চ্যাম্বারলাইন এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, অতীতে পদ্মার গতিপথ বদলানোর সূত্র তারা প্রথমবার ধরতে পারেন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে। চিত্রগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় তারা দেখতে পান, ঢাকার প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণের অবস্থানে পদ্মার কাছে মাটির গভীরে সমান্তরালে পুরোনো নদীর মত একটি চ্যানেল রয়েছে। তারা আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য ঢাকার দক্ষিণের ওই অঞ্চলে অনুসন্ধান শুরু করেন এবং কাদামাটির নিচে পুরোনো চ্যানেলের মত আঁকাবাঁকা আরও পথ খুঁজে পান। ভূমিকম্পের কারণে কাদামাটির নিচে এমন উলম্ব আঁকাবাঁকা বালির চ্যানেল তৈরি হয়, যেগুলোকে ‘সিসমাইট’ বা ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট ‘বালির উলম্ব বেণী’ বলা হয়।
গবেষণাপত্রে লিজ চ্যাম্বারলাইন উল্লেখ করেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বের শিলং মাসিফ অঞ্চলে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের মধ্যে টক্করের কারণে আড়াই হাজার বছর আগে যে ভূমিকম্পটি হয়েছিল, তার জেরে ভারত মহাসাগরের খড়িমাটি ক্রমেই বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব ভারতীয় প্লেটের নিচে আরও গভীরে ডুবতে থাকার চাপজনিত শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে। দুই অঞ্চলে ঘটা ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার কারণে ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়েছিল, সেখান থেকে পদ্মার গতিপথ বদলের যাওয়ার বা বালির চ্যানেলগুলো খুঁজে পাওয়ার স্থানের দূরত্ব অন্তত ১৮০ কিলোমিটার। গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, এই দূরত্বের জায়গা হিসেবে রাজধানী ঢাকার উত্তর, অর্থাৎ পদ্মার পাবনা অঞ্চলকেই চিহ্নিত করছে।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ৭মিনিটে একটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল। এর উৎপত্তিস্থল ছিল পাবনার আটঘরিয়ায়। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এতে পাবনাসহ কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর কেঁপে উঠেছিল। এই ভূমিকম্পের স্থায়ীত্ব ছিল ১৩ সেকেন্ড। এর আগেও গত বছরের ২ ডিসেম্বর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। ৫ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পর উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে দেশে মাত্র ৯ দিনের ব্যাবধানে তিনবার আর পাঁচ মাসে সাতবার ছোট থেকে মাঝারি আকারের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে। বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণেই ঘন ঘন এ ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এ দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমে রয়েছে, যেগুলো অনবরত বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে। আগে হোক বা পরে হোক- এই শক্তি যে কোনদিন বেরিয়ে আসবেই। আর সেটারই জানান দিয়ে চলেছে ছোট ভূমিকম্পগুলো। এটা হলো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস।
প্রাপ্ত
তথ্য বলছে, তুরস্ক-সিরিয়ার মতো বাংলাদেশও এখন ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এখানে মোটামুটি ৫টি ফল্ট লাইন আছে। ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি ফল্ট লাইনে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সীমান্ত এলাকায় এরকম আরও ২-৩টি ফল্ট লাইন আছে। দেশের ভতরেও বঙ্গবন্ধু সেতুর আশপাশে এবং নোয়াখালীতে এরকম ফল্ট লাইন আছে।
0 Comments: